পানির সংকট দেশে দেশে

 


আমেরিকান কার্টুনিস্ট ম্যাট গ্রোইনিংয়ের অ্যানিমেটেড সিরিজ ‘দ্যা সিম্পসনস’ - এর সুপারভিলেন চরিত্র সি. মন্টগোমারি বার্নসের একটি দৃশ্য - দরজায় একগুচ্ছ লাল গোলাপ এবং হার্ট (হৃদয়) আকৃতির নিয়ে দাঁড়িয়ে মিস্টার বার্নস। মুচকি হেসে বলছেন, ‘আমি দেখেছি আপনার পানিবণ্টনের ধরণ (রেশনিং), আমার চেয়ে আলাদা’। সম্প্রতি কলম্বিয়ার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন মিম দৃশ্য ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হচ্ছে। কারণ দেশটির রাজধানীর শহর বোগোটা দেখছে চরম পানির সংকট

ভয়াবহ খরায় এ অঞ্চলের জলাধারের পানি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে নিম্নস্তরে নেমে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে ৯০ লাখ মানুষের রাজধানী শহরে পানি ব্যবহার সীমিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি এপ্রিল মাসের শুরুতে কলম্বিয়ার বোগোটা শহরের কর্তৃপক্ষ পানিবণ্টনের ঘোষণার পর শহরের নাগরিকরা হাস্যরসেভরা এই মিম দৃশ্য শেয়ার করে, ক্যাপশনে লিখছেন ‘এই নিনোর মতো দাবদাহের বছরে জলাধারগুলো খরায় শুকিয়ে যাবে আর মানুষকে বেঁচে থাকতে পানি সম্পদকে (রেশনিং) বণ্টন করতে হবে।’

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বোগোটা ও এর আশেপাশের কয়েক ডজন এলাকাকে নয়টি অঞ্চলে ভাগ করেছেন। প্রতিটি অঞ্চলে ধারাবাহিকভাবে ২৪ ঘণ্টা করে পানি সরবরাহ সেবা বন্ধ থাকবে। যা সেসব অঞ্চলে প্রতি ১০ দিন অন্তর অন্তর কার্যকর হবে। তবে হাসপাতাল ও স্কুলগুলো এ পদক্ষেপের বাইরে থাকবে। কলম্বিয়ান সরকারের ঘোষণার পর - বৃহস্পতিবার থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে। 

বোগোটার মেয়র কার্লোস ফার্নান্দো গালান জানিয়েছেন, পানির এই সংকটে ভয়ানক পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। বোগোটা শহর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্থানীয় জলাধারগুলোর পানির স্তর আশঙ্কাজনকভাবে নিচে নেমে আসায় জরুরী এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গণমাধ্যমগুলোর প্রকাশিত প্রতিবেদন গুলোতে দেখা গিয়েছে তীব্র গরম ও বৃষ্টির অভাবে কলম্বিয়ার জলাধারগুলোর পানি আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে। বোগোটা শহরের প্রায় ৭০ শতাংশ পানির চাহিদা পূরণের সরবরাহ আসে সান রাফায়েল ও চুজা জলাধার থেকে। সেটিতেও ধারণ ক্ষমতার প্রায় ১৭ শতাংশ পানি কম রয়েছে। বোগোটার মেয়র কার্লোস ফার্নান্দো গালান জনসাধারণকে আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এই সময় বোগোটায় আমরা এক ফোঁটা পানি ও নষ্ট না করি। ফলে পানি নিয়ে যে বিধি নিষেধ চলছে তা তুলে নেওয়া বা কমানো যাবে। মেয়র কার্লোস ফার্নান্দোর ভাষ্যমতে ৪০ বছরের মধ্যে জলাধারটিতে এত কম পানি কখনোই ছিল না। সাধারণত বছরের এই সময় জলাধারগুলোতে ২০ শতাংশের কম পানি থাকে। ব্যতিক্রম দেখা গেছে এ বছরে। পানির স্তর ভয়াবহ পরিমাণ নিচে নেমে গেছে। যা শহরবাসীর কাছে মোটেও সুখকর বিষয় নয়। কলম্বিয়ায় পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া নিয়ে এক্সে পোষ্ট করে দেশটির প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পোত্রে বলেছেন, ‘আগামী ৩০ বছর কলম্বিয়ায় পানি সম্পদ রক্ষায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হবে।’ বোগোটার বাসিন্দারাও পানির ব্যবহার কমিয়েছেন। শহরটির বাসিন্দা ক্লারা একসোবার বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, (পানির সংকটের কারণে) কিছু কাজ আর করা হচ্ছে না যেমন - গাড়ি ধোয়া। শহরের আরেক বাসিন্দা আইজ্যাক সান্দোভাল জানিয়েছেন, গোসল করতে আমি সর্বোচ্চ চার মিনিট সময় নিচ্ছি তবে কাপড় ধোয়া আর হচ্ছে না। কলম্বিয়ার ইতিহাস থেকে জানা যায়, সাম্প্রতিককালে পানির ভয়াবহ সংকটের কারণে প্রথমবার  বোগোটা কর্তৃপক্ষ রাজধানী বাসীর জন্য পানি বণ্টন ব্যবস্থা করতে বাধ্য হয়। জাভেরিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আরমান্দো সারমিয়েন্টো বলেছেন, পৃথিবীর বেশিরভাগ শহর তাদের পানির জন্য জলাশয়ের উপর নির্ভর করে, বোগোটা তাদের থেকে আলাদা, এ ক্ষেত্রে বোগোটা জলাশয় থেকে বৃষ্টির উপর বেশি নির্ভরশীল। তিনি আরো বলেন, বৃষ্টির উপর নির্ভরতাই বোগোটাকে খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। 

লাতিন আমেরিকার দেশে পানির সংকট কোন অস্বাভাবিক বিষয় নয়। কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোটা সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে ২ হাজার ৬০০ মিটার (৮ হাজার ৫০০ ফুট) উপরে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু রাজধানী শহরগুলোর মধ্যে একটি। পূর্বে আন্দিজ পর্বতমালা, পশ্চিমে ম্যাগডালেনা উপত্যকা রয়েছে। উপত্যকাটি বরাবরই পাহাড়ের উপর উঠে গেছে। ফলে গ্রীষ্মমন্ডলীয় রেইন ফরেষ্ট অঞ্চল হওয়ায় প্রায়শই এই অঞ্চলে বৃষ্টি হয়। তাই ঘন ঘন হওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষ বৃষ্টির উপরই বেশি নির্ভরশীল। জলবায়ুর পরিবর্তন এ সব অঞ্চলে খরার প্রধান কারণ। এ ছাড়া দ্রুত নগরায়ণ ও দূর্বল অবকাঠামোকেও পরিবেশগত এ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।




পানির জন্য জীবন।এই পানি আবার একটি জটিল সমস্যা। অর্থাৎ পানির অভাব। কারন হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করা হলেও বাড়তি উদ্বেগ হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘এল নিনো’।



Previous Post
Next Post
Related Posts